বিনি সুতোর বাঁধন! একটি নাগরিক কল্পনা : তুহিনাংশু মুখার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৫ আগস্ট ২০২১ | ১৯০৬ বার পঠিত
আমরা খুঁজে পাই আমাদের চরিত্রদের, না তারা কোন অভিজাত শহরের উচ্চ মধ্যবিত্ত নয়, নয় কোন অলীক রূপকথার নায়ক নায়িকা কিংবা রহস্যময়ী কোন অতি-মানবী। আমরা দেখতে পাই তারা নেহাতই ছাপোষা জীবনের মালিক। ব্যক্তিগত কিছু কথাবার্তা চলে, দুটি চরিত্রের ভেতর আমরা দর্শক একটু একটু করে ঢুকি। ছবির এই অংশে ঋত্বিক চক্রবর্তী এবং জয়া আহসান উভয়ের অভিনয় যথাযথ, চিত্রগ্রহণ ও মোটামুটি ভাবে সাবেকি, যেন অতি পরিচিত বিষয় আমরা দেখতে পাই অতি সহজে ভাবেই। ছবির আসন্ন ভবিষ্যতের জন্য, পরিচালকের লুকোনো তাসে ট্রাম্প করার প্রয়োজনে যে এ এক প্রস্তুতি চাল, তা দর্শক হিসাবে আমরা ধরতে পারিনা। এর কিছু মুহূর্ত পর আমরা যখন তাদের নতুন ভাবে আবিষ্কার করা শুরু করি, আমরা বুঝি যে সহজ সরল ভঙ্গির বহিঃ কাঠামোয় লেখক তথা পরিচালক আসলে হাঁটতে চান শহুরে মনস্তত্ত্বের জটিল সারণি ধরে।
বিচ্ছেদের ক্রন্দন- ‘মাম্মো’ ও দেশভাগ : তুহিনাংশু মুখার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা : সিনেমা | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২২৭৪ বার পঠিত | মন্তব্য : ২
এই ছবিতে শ্যাম বেনেগাল সচেতনভাবে যে সিদ্ধান্তটি নেন এবং যথার্থ শিল্পী হিসাবেই নেন – তা ছবিটিকে দেশভাগকেন্দ্রিক অন্যান্য ছবিগুলির থেকে স্বাতন্ত্র্য দেয়। মূলত তিনি নিবিষ্ট-চেতনার আলোয় ৭০-এর দশকের সেই গা-ছমছমে সময়ে, একজন প্ৰান্তিক মানুষের অবস্থানকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। কারণ তাঁর অসামান্য শৈল্পিক মেধা জানত, যে শতাব্দীর শেষে যখন মানুষ একটি নতুন ভোরের খোঁজে আকুল, তখন ৪৫ বছর আগের এক রাজনৈতিক অবিচক্ষণতা মানুষকে আর নতুন করে বিব্রত করতে পারে না। একমাত্র মানবিক সম্পর্ক, স্মৃতি এবং সমকালের সমাজচিত্রের মধ্যে দিয়ে উস্কে দেওয়া সম্ভব সেই দগদগে ঘায়ের ছোপ ছোপ স্মৃতি।
ঋত্বিক, বিপ্লব ও আজকের অবক্ষয় : তুহিনাংশু মুখার্জি
বুলবুলভাজা | আলোচনা | ০৫ নভেম্বর ২০২১ | ২৩৬১ বার পঠিত | মন্তব্য : ১৭
এখন ঋত্বিককে সমকাল আপন করে নেয়নি, সে নেয়নি যেমন ভ্যান গঘকে নেয়নি, কাফকাকে নেয়নি, নেয়নি রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্তকে। তবে ঋত্বিকের ক্ষেত্রে এই প্রত্যাখ্যান যতটা না মানুষের তার চেয়ে বেশি সিস্টেমের, সমান্তরাল ছবি কিংবা বাম রাজনীতি শুধু নয়, অতিবাম কিংবা নিতান্ত সাধারণ গণসংগঠন কেউই তাঁকে বুঝে উঠতে পারল না। তবে যে বাম রাজনীতি ৫০ এর দশকের উদ্বাস্তু আন্দোলনের আয়নায় নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তিকে নতুনভাবে আবিষ্কার করল, তারা ঋত্বিক নামক এই ধারালো ছুরিটিকে কেন যে হাতে তুলে নিল না তা ভেবে আমার ধন্দ লাগে বৈকি। যদিও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বা সাদান হোসেন মানটোর মতন ঋত্বিকও কোন প্রতিষ্ঠানের বক্ষলগ্ন হতে পারেন না, কারণ ইতিহাসের কাছে তাঁদের পরিচিতি তাঁরা গণশিল্পী, মানুষের শিল্পী, সত্যের ও সময়ের রূপকার। সেই কারণেই কোমল গান্ধার চলচ্চিত্র না হয়ে হয়ে ওঠে কালের এক প্রবন্ধ। কুমারসম্ভবের অনুষঙ্গে ঋত্বিক যেন লিখতে বসেছিলেন তাঁর সমকাল, গণনাট্যের বিরোধ, দুই বাংলার বিরহ আর আমাদের শকুন্তলার আর্ত চোখে আনতে চেয়েছিলেন বন্ধনমুক্তির আকুল আবেদন। সুবর্ণরেখার অন্তিম হৃদস্পন্দন যেমন আমাদের লজ্জায় অবনত করে রাখে, আমাদের প্রজন্মকে উপহাস করে এই বলে যে দেশভাগ দ্যাখে নাই, দাঙ্গা দেখে নাই, মন্বন্তর দেখে নাই! ছুঁড়ে ফেলে দেয় ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশ যাত্রাকে আগুনের কোলে, উত্তর আধুনিকদের সাথে কোন রকম বাদানুবাদে টেবিল গরম না করেই। যেমন নিম্নবর্গীয় ইতিহাস চর্চার সুযোগ না পেয়েই তিনি লিখে ফেলেন দলিতের ভাষ্য যেখানে রাম জননী কৌশল্যা হয়ে ওঠেন এদেশের অন্ত্যজ জাতের এক রাণী, শ্রী রাম হয়ে ওঠেন বাগদি সন্তান তেমনি আবার কোমল গান্ধার তুলনামূলক নিকট কালের এক পর্যায় থেকে কিছু টুকরো শট সোজাসুজি আমাদের দিকে ছুঁড়ে মারে।